জমি জমা সংক্রান্ত নতুন আইন কি
বাংলাদেশে অনেক মানুষ আছেন যারা এখনও জানেনা জমি জমা সংক্রান্ত নতুন আইন কি, এই বিষয়ে সঠিক তথ্য পেতে হলে আমার লেখা আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পুরুন। আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করব, সেই বিষয়টি নিয়ে, চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
এই বিষয়ে সঠিক জ্ঞান ও ধারনা সবারই থাকে না। না জানা মানুষ গুলো জমি নিয়ে বিভিন পরিস্থির স্বীকার হয়, তারা সঠিক বুঝতে পারেনা জমির জন্য কোথায় যেতে হয় ও কি করতে হয়। আমার লেখা তাঁদের জন্য।
ভুমিকা
যার নামে দলিল থাকবে, তিনিই হবেন ওই ভুমির মালিক। নতুন ভুমি আইনে দখলের মাধ্যমে মালিকানার সুযোগ থাকছেনা। জমি ও কাগজ যার মালিকানাস্তত্বও তাঁর। কাজেই আপনার জমি কেউ দখল করতে পারবেনা নিশ্চিত থাকুন।
অনলাইনে ভুমি উন্নয়ন কর কিভাবে দেবেন,বারিওয়ালা হিসেবে নিজের প্রয়োজন ছারাও বেশ কিছু কারণে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করতে পারেন। সেটা হল, ভাড়ার বয়সসীমা নির্ধারণ থাকলে, আপনার অনুমতি ছাড়া বাড়ির নকশা পরিবর্তন করলে ইত্যাদি।
তিন বছর খাজনা না দিলে জমি খাস হয়ে যাবে। মেয়াদ শেষে দখল বুঝিয়ে না দিলে, বাড়িওয়ালা আপনার উচিত হবে দেড়ি না করে ঘর ভাড়াটিয়ার কাছে অভিযোগ করা।
জমি জমা সংক্রান্ত নতুন আইন কি
আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বসবাস উপযোগী বসতভিটা এবং চাষাবাদ যোগ্য জমিকে নির্ভেজাল রাখতে আপনি সচেতন হন। তাই আপনার জমি জমা সংক্রান্ত আইন জেনে রাখা প্রয়োজন। নতুন আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে,
ভুমির জবর দখল ক্ষতি, জাল কাগজপ্ত্র তৈরি করে জালিয়াতি বা প্রতারণা বনদ্ধ করাই এই আইনের প্রধান উদ্দেশ্য। সেই সঙ্গে দেওয়ানি ও ফোজদারি মামালার দীর্ঘ সময় হ্রাস করে জনগণের ভোগান্তির দূর করা, এবং ভুমি সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধে দ্রুত প্রতিকার দেয়ার জন্য আইনটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত ভূমি অপরাধ প্রতিরোধে ও প্রতিকার আইন ২০২১ আইনে যেসব অপরাধে চিহিন্ত করে সেগুলোর জন্য যে সাজা প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুল আলোচনা করা হল।
জাল দলিল তৈরি করলে কারাদন্ড কি হবে
যদি কোন ব্যক্তি মালিকানা ধীন বা সরকারি খাসভুমি বা কোন প্রতিষ্ঠানের জমির দলিল জাল করেন, তাহলে ৬মাস থেকে ২ বছরের কারাদন্ড ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।
মালিকানার অতিরিক্ত জমির দলিল সম্পাদন
কোন ব্যক্তি যদি যতটুকু জমির মালিকানা রয়েছে, তাঁর চেয়ে বেশি জমির দলিল করেন, তাহলে তাঁর দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড সহ তিন লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে।
একই জমি একাধিক বার বিক্রয়
কোন ব্যক্তি যদি তাঁর বিক্রিত জমি পুনরায় বিক্রি করে তাহলে তাঁর দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং তিন থেকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। এটি জামিন অযোগ্য অপরাধ হবে।
বায়নাকৃত জমির পুনরায় চুক্তি করা
বিক্রয় চুক্তি বা বায়না চুক্তির করার পর অন্য কোন ব্যক্তির সঙ্গে আবার চুক্তি করলে তাঁর দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং তিন থেকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা।
তথ্য গোপন করে দানপ্ত্র
তথ্য গোপন করে বা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অথবা প্রতারণা করে যদি কোন ব্যক্তি অন্য আরেকজনের কাছ থেকে জমির দান দলিল করে তাহলে সেটা একটা অপরাধ হবে। সেইজন্য ৬মাস থেকে ২ বছরের কারাদণ্ড। সেই সাথে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।
অবৈধ দখল
বৈধ কাগজপ্ত্র না থাকার পরেও কেউ যদি ব্যক্তি মালিকানা ধীন সরকারি খাস ভূমি বা কোন সংস্থার জমি জোর করে দখল করে, সেই জন্য তাঁর তিন বছরের কারাদণ্ড এক লক্ষ থেকে তিন লক্ষ টাকা জরিমানা।
বিনা অনুমতিতে জমির উপরের স্তর কেটে নেওয়া
জমির মালিকের অনুমতি ছাড়া যদি কেউ উপরের স্তর থেকে মাটি উত্তলন করে বা করানো হয়, তাহলে ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড সহ দুই লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে।
অধিগ্রহণের পূর্বে অতিরিক্ত মূল্যে জমির দলিল
কোন এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে, এমন খবর জানতে পেরে কেউ যদি সরকারি নির্ধারিত মুল্যের অতিরিক্ত মুল্যে ভূমি নিবন্ধন করেন, তাহলে সেটি একটি অপরাধ হিসেবে ধরা হবে। সেই জন্য তাঁর ৫০ হাজার টাকা সহ দুই বছর কারাদণ্ড হবে।
জমি জমার কোন কাগজ কোথায় পাওয়া যায়
- সর্বশেষ রেকর্ডের খসড়া পর্চা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে পাওয়া যায়।
- সর্বশেষ রেকর্ড সহ যে কোন রেকর্ডের সই মুহুরি পর্চা জেলার কালেক্টর সাহেবের রেকর্ড রুমে পাওয়া যায়।
- রেজিস্ট্রিকৃত কবলা বা দলিলের নকল উপজেলা সাব রেজিস্টার অফিসে পাওয়া যায়।
- বহু বছরের পুরানো দলিল জেলা সাব রেজিস্টার অফিসে পাওয়া যায়।
খতিয়ান কি
মোজা ভিত্তিক এক বা একাধিক ভূমি মালিকের ভু-সম্পত্তির বিবরণ সহ যে ভূমি রেকর্ড জরিপকালে প্রস্তুত করা হয়, তাকে খতিয়ান বলে। এতে ভুমধ্যাধিকারীর নাম ও প্রজার নাম জমির দাগ নং, পরিমাণ, প্রকৃতি, খাজনার হার ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে।যেমনঃ
CS(সি এস)-Cadastral Survey ( ১৮৮৮)
RS (আর এস)-Revitionel Survey
SA (এস এ)- (১৯৫৬)
PS (পি এস)-Pakistan Survey
BS (বি এস)-Bangladesh Survey (১৯৯০)
সিটি জরিপ -City Survey
নিচে বিভিন্ন খতিয়ানের আলোচনা করা হলঃ
সি এস খতিয়ান
১৯১০-২০ সনের মধ্যে সরকারি আমিন গন প্রতিটি ভূমিখণ্ড পরিমাপ করে উহার আয়তন, অবস্থান, ও ব্যবহারের প্রকৃতি নির্দেশক মজা নকশা এবং প্রতিটি ভূমি খণ্ডের মালিক দখলকারের বিবরণ সংবলিত যে খতিয়ান তৈরি করেন, সি এস খতিয়ান নামে পরিচিত।
আর এস খতিয়ান
একবার জরিপ হওয়ার পর তাতে কোন ভুল সংশোধনের জন্য পরবর্তীতে যে জরিপ করা হয়, তাকে আর এস খতিয়ান বলে। বাংলাদেশের অনেক এলাকায় একে বি এস খতিয়ান বলে চেনে থাকে।
এস এ খতিয়ান
১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ আইন পাসের পর সরকার জমিদারি অধিগ্রহণ করেন। সরকারি জরিপ কর্মচারীরা মাঠে না গিয়ে সি এস খতিয়ান সংশোধন করে যে খতিয়ান প্রস্তুত করেন তা এস এ খতিয়ান নামে পরিচিত।
পি এস খতিয়ান
এস এ জরিপ কেই পি এস খতিয়ান বলে। ১৯৫৬ হতে ১৯৬২ পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালিত হয়।
বি এস খতিয়ান
সর্বশেষ এই জরিপ ১৯৯০ সালে পরিচালিত হয়। ঢাকা অঞ্চলে মহানগর জরিপ হিসাবেও পরিচিত।
জমা খারিজ কি
জমা খারিজ অর্থ যোথ জমা বিভক্ত করে আলাদা করে নতুন খতিয়ান সৃষ্টি করা। প্রজার কোন জোতের কোন জমি হস্তান্তর বা বণ্টনের কারনে মুল খতিয়ান থেকে কিছু জমি নিয়ে নতুন জোত বা খতিয়ান খোলাকে জমা খারিজ বলে।
লেখকের মন্তব্য
আপনার ভবিষ্যৎ সন্তানের জন্য বসবাস কারী উপযোগী ভিটা এবং চাষের জন্য ভেজাল মুক্ত যেন জমি হয়, সেই জন্যই আমার এই লেখাটির মুল উদ্দেশ্য। আপনারা যদি এটি পরে উপকৃত হন তাহলে আমার লেখা সার্থক হবে।
যদি আমার লেখা বা জমি জমা সংক্রান্ত আইন বিষয়ে সঠিক তথ্য পেয়ে থাকেন, তাহলে আপনারা লাইক, কমেন্ট, ও অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url