গর্ভাবস্থায় রোজা রাখার উপায় কি
দেখতে দেখতে আবার চলে আসছে রমজান মাস ।যারা নতুন মা হবেন তারা সঠিক ভাবে বুঝতে পারছেন না আসলে তারা কি করবেন।গর্ভাবস্থায় রোজা রাখার উপায় কি এই বিষয়টি আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করব।গর্ভবতী মায়েদের রমজামাসের রোজা রাখলে কোন সমস্যা হয় না।
- গর্ভাবস্থায় রোজা রাখার উপায় কি
- গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি
- গর্ভবতী মায়ের রোজার খাবার কেমন হবে
- গর্ভের প্রথম তিন মাস
- গর্ভের মধ্যবর্তী তিন মাস
- গর্ভের শেষ তিন মাস
- গর্ভবতী মায়ের সেহেরির খাবার কেমন হবে
- সতর্কতামূলক পরামর্শ
শিশুর কোন সমস্যা হবে কিনা এসব কিছু ভেবে অনেকের রোজা রাখা সাহস পাচ্ছেন না? অনেকের পরিবার অন্যান্য সদস্য গুলো রোজা রাখতে নিষেধ করছেন ।গর্ভবতী মায়েদের রমজামাসের রোজা রাখা যাবে কি এই বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখা ভালো হয়।
গর্ভাবস্থায় রোজা রাখার উপায় কি
গর্ভাবস্থায় রোজা রাখার উপায় কি? রমজান মাস একটি পবিত্র মাস। গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিষয়টি যারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের এই সময় কি করতে হবে, কোন খাবারগুলো খেতে হবে, সে বিষয়টি নিয়ে আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করব।গর্ভবস্থায় রোযা রাখার উপায় কি? রমজান মাসে একজন
গর্ভবতী মা রোজা রাখতে পারবে কিনা,প্রেগনেন্সি আসলে কোন রোগ না এবং এটি কোন অসুস্থ না। ছোট একটি মেয়ে বড় হয় এক সময় তার বিয়ে হয় এবং একপর্যায়ে সে মা হতে চায় অর্থাৎ গর্ভবতী হয়। একজন অসুস্থ ব্যক্তির রোজা রাখতে পারবে কিনা কিন্তু একজন গর্ভবতী মা রোজা রাখতে পারবে।
আরও পড়ুনঃ শিশুর বাড়তি খাবারের গুরুত্ব কি
এতে কোন সমস্যা নেই তবে এই সময় একজন গর্ভবতী মাকে সতর্কতা থাকতে হবে। তবে এই সময় একজন গর্ভবতী মাকে বেশি সতর্কতা থাকা প্রয়োজন। হয়ে থাকে একজন গর্ভবতী মায়ের যদি কোন শারীরিক সমস্যা না থাকে তাহলে সে রোজা রাখতে পারবে। কোন সমস্যা নাই কিন্তু রোজা রাখতে পারবে কিনা এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে তার শরীরের উপর।
দরকার হলে সেই ব্যক্তি একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। আবার অনেকে ধারণা এমন হয় যে যদি কোন মা রোজা রাখে তাহলে সন্তান বুকের দুধ খেতে পায় না।মায়ের বুকে দুধ শুকিয়ে যায় এই ধারণা সঠিক নয় আসলে মায়ের বুকের দুধ কমে না।
গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি
গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি?বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস রোজা না রাখাই ভালো। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে রোজা রাখা যাবে। যাতে করে আপনার এবং পেটের সন্তানের স্বাস্থ্যের কোন সমস্যা না হয়। আপনার গর্ভের কোন রোগ আছে কিনা যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তশূন্যতা প্রসাবে ইনফেকশন ইত্যাদি।
কোন মেডিকেল সমস্যা আছে কিনা এসব সমস্যা দেখে নিতে হবে। এছাড়া কোন সমস্যা থাকলে আপনার এবং বাচ্চার সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আপনাকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। গর্ভের কোন অবস্থায় আপনি আছেন প্রথম দিকে নাকি শেষ দিকে? বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে প্রথম দিকে রোজা না রাখাই ভালো গর্ভের শেষ থেকে রোজা রাখা ভালো।
রমজান মাস কোন সময় হচ্ছে অনেক সময় রমজান মাস রোজা সময়টা অনেক বেশি হয়। যেমন রোজা ১৫ থেকে ১৬ ঘন্টা হয়ে থাকে ।কারণ সে সময় গর্ভবতী মায়েদের রোজা রাখা খুব কষ্টদায়ক হয়ে যায় ।যদি রোজার শীতকালে হয়।তাহলে শীতকালের রোজা হলে দিন ছোট হয় আর গর্ভবতী মায়ের রোজা রাখার ক্ষেত্রে কষ্টটা একটু কম দায়ক হয় এবং বাচ্চাটাও ভালো থাকে।
এছাড়াও লম্বা রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করা থেকে বিরত থাকুন। রোজার শেষে ঈদ হয় সেক্ষেত্রে শপিং করার জন্য রোজা থেকে শপিং করাটা না করাই ভালো। কারণ রোজা থেকে শপিং করলে শরীরের ক্ষতি হয় এবং বাচ্চারও সমস্যা হয়। এ ক্ষেত্রে রোজার শেষে ইফতারের পর শপিং করাটা ঠিক হয়।এছাড়া গর্ভবতী মাকে বেশিরভাগ সময় ঠান্ডা জায়গায় থাকাটা ভালো।
গর্ভবতী মায়ের রোজার খাবার কেমন হবে
একজন গর্ভবতী মা কি ধরনের খাবার খেলে তার পেটে সন্তান ভালো থাকবে, সেজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খেতে হবে। এই সময়ে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা অনুযায়ী পর্যাপ্ত প্রোটিন থাকতে হবে। কারণ বাচ্চার বৃদ্ধির জন্য আমিষ বা প্রোটিন খুবই প্রয়োজন। কি কি খাবার খেলে এগুলো থাকবে যেমন, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ শীতে আপনার শিশুর যত্ন নিবেন কিভাবে
এ সকল খাবার অভ্যাস না থাকে তাহলে গর্ভবতী মায়ের কোষ্ঠ কাঠিন্য সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই সাথে একজন গর্ভবতী মাকে প্রচুর পরিমাণে ফলমূল খেতে হবে। এছাড়াও ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।
সেটা তরল অথবা ফলমূল কিংবা জুস, ও দুধ খেতে হবে। যেটা সারাদিন খায় সেই পানি ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত খেতে খেয়ে নিতে হবে। গরমের সময় গর্ভবতী মা যদি রোজা রাখে তাহলে তার পারে শূন্যতা হয়ে যায় তাই তাকে বেশি করে পানি খেতে হবে।
গর্ভের প্রথম তিন মাস
অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস রোজা না রাখা উত্তম। কারণ এই সময় শিশুর অঙ্গ পতঙ্গ গড়ে ওঠে বা তৈরি হয়। তাই এ সময় মায়ের শরীরের সঠিক মাত্রায় নির্দিষ্ট পরিমাণে পুষ্টি ভিটামিন ক্যালসিয়াম ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দরকার হয়। কারণ এ সময় শিশু যেহেতু মায়ের শরীর থেকে তার পর্যাপ্ত পরিমাণে সবকিছু পায়।
তাই মায়ের শরীরের যদি কোন কিছুর অভাব ঘটে এবং সেটা শিশুর পরবর্তী জীবনে শিশুর জন্য সমস্যা হয়ে পড়ে। এছাড়াও অনেক মায়ের প্রেশার বা রক্তচাপ বেড়ে যায়। তাই এ সময় ডাক্তারের চিকিৎসা অনুযায়ী গর্ভবতী মা কে কিছু ওষুধ খেতে হয় ও নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। রোজা রাখলে এটি করতে হবে।
তাছাড়া গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস যেহেতু গর্ভবতী মায়েদের বেশি বমি বমি ভাব হয়, মাথা ঘুরায়,খেতে কষ্ট হয়, ওজন কমে যাওয়ার ভয় থাকে তাই এর প্রথম তিন মাস রোজা না রাখাই ভালো।
গর্ভের মধ্যবর্তী তিন মাস
গর্ভকালীন মাঝে তিন মাস একজন গর্ভবতী মা কিছুটা আরামে থাকে। কারণ মধ্যবর্তী তিন মাসে একজন গর্ভবতী মা একটু ভালো আরামদায়ক অনুভব করে। আর এই সময়ের মধ্যে বাচ্চাটি রোগ গঠন তৈরি হয়। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে একজন গর্ভবতী মা রোজা রাখতে পারবেন। তবে দিন ছোট থাকার কারণে শীতকালে কষ্ট কম হয় এবং রোজা রাখতে ভালো পারে।
এছাড়া গরমের দিনে রোজা হলে গর্ভবতী মাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখাই ভালো। যাদের গর্ভকালীন সময় ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের রোজা না রাখাই ভালো হয়।
গর্ভের শেষ তিন মাস
একজন গর্ভবতী মাসের শেষে তিন মাস খুবই সর্তকতা অবলম্বন করতে হয় ।যেহেতু এ সময় মায়ের পেটে বাচ্চা খুবই তাড়াতাড়ি বাড়ে।তাই গর্ভবতী মা ও তার অনাগত সন্তানের পুষ্টি নিশ্চিত করতে মাকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার খাওয়া ও বিশ্রাম নিতে হবে। সেজন্য এই সময় একজন গর্ভবতী মাকে রোজা না রাখাই ভালো।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্ট
এছাড়া একজন গর্ভবতী মা যারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন তাদের একটু বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এছাড়া অনেকে চিকিৎসার পরেও যাদের এ অবস্থা তৈরি হয়েছে সেসব প্রেগনেন্সি মায়েদের রোজা না রাখাই ভালো।তবে রোজা রাখতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা রাখা উত্তম।
গর্ভবতী মায়ের সেহেরির খাবার কেমন হবে
গর্ভবতী মায়ের সেহেরির খাবার কেমন হবে? বিসয় গুল জানা দরকার।গর্ভবতী মা যদি রোজা রাখে তাহলে তার খাবারের তালিকায় একজন স্বাভাবিক মানুষের খাবারের মতো সুষম খাবার খাবে। তবে অবশ্যই তাকে খাবারে তালিকায় ক্যালোরি ও আসযুক্ত খাবারের দিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়াও প্রোটিন বা আমিস যুক্ত খাবারটাকে খেতে হবে।
গরমের সময় রোজা রাখতে চাইলে পানি শূন্যতা যাতে না হয় এবং শরীরের লবণের পরিমাণ যেন কমে না যায় সেজন্য তাকে পানি বেশি করে খেতে হবে। যেসব খাবারে বেশি গ্যাস হয় বুক জ্বালাপোড়া করে সেসব খাবার সেহরির সময় না খাওয়াই ভালো।
সতর্কতামূলক পরামর্শ
গরভবস্থায় রোযা রাখার জন্য কিছু সতর্কতা মুলক পরামর্শ আলোচনা করা হোল।গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ভাজাপোড়া তৈলাক্ত ও বাঁশি খাবার ইত্যাদি সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুনইফতার ও সেহেরীতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খান এবং কোন অবস্থায় সেহরি না খেয়ে রোজা রাখার চেষ্টা কখনো করবেন না এতে করে আপনার শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি আসতো প্রোটিনযুক্ত ও ফ্যাট সম্পূর্ণ খাবার খান।
কারণ এসব খাবার ধীর গতিতে পরিপাক হয় এছাড়া খোদা কম লাগে।রোজার সময় বিশেষ করে ঠান্ডা জায়গায় বিশ্রাম নিন এবং দুশ্চিন্তা কম করুনএ সময় আপনি তরল জাতীয় খাবার খেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় রোদে বা গরমে না থেকে খোলামেলা ঠান্ডা পরিবেশে থাকার চেষ্টা কর।গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ ক্যালোরির প্রয়োজন হয়।
এজন্য একজন গর্ভবতী মাকে দিনে ছয়বার বা তার বেশি খাবার খেতে বলা হয় ।গরমকালে রোজা রাখলে সাধারণত শীতকালের চেয়ে অধিক সময় ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। এই দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই কষ্টদায়ক হয়ে যায়।
তাছাড়া গরমে গর্ভবতী মা প্রচুর পরিমাণে ঘামে ডিহাইড্রেশন বা পানি শুন্যতায় ভুগতে পারে। এছাড়া তার পেটে অনাগত শিশুটি রোজা রাখার ফলে অপুষ্টি ও কম ওজন নিয়ে জন্ম নিতে পারে ফলে শিশুটির জন্য খুব ক্ষতিকর হয়। এর পাশাপাশি গর্ভবতী মায়ের মূত্রনালীতে ইনফেকশন হতে পারে।
লেখক এর মন্তব্য
একজন গর্ভবতী মা সুস্থ্য সন্তান জন্ম দেবে এটা সকলের কাম্য। এবং মা ও শিশু যেন উভয় সুস্থ্য ও ভালো থাকে।গর্ভাবস্থায় রোজা রাখার উপায় কি?গর্ভাবস্থায় রোজা রাখলে যদি মা বা বাচ্চার ক্ষতি হয়। বা যদি ডাক্তারের কোন পরামর্শ বা নিষেধ থাকে তাহলে এ সময়ে রোজ না রাখাই ভালো।
গর্ভাবস্থায় রোজা রাখার উপায় কি? বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে সঠিক তথ্য যদি আপনাদের দিতে পারি এবং আপনাদের যদি কোন উপকারে আসে তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন এবং একটি লাইক কমেন্ট দিবেন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url