OrdinaryITPostAd

বোতলজাত বাজারের সব পানি কি নিরাপদ না বিপদ

পানির অপর নাম যেমন জীবন ঠিক তেমনি দূষিত পানির অপর নাম মরণ। বোতলজাত বাজারে পানি কি নিরাপদ না বিপদ? আজকের আলোচনায় আপনাদের সেই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। প্রিয় পাঠক বিষয়টি জানতে হলে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
বোতলজাত বাজারের সব পানি কি নিরাপদ না বিপদ


পৃথিবীর চারভাগের তিনভাগ জল ও একভাগ স্থল। তিনভাগ জলের মধ্যে আমরা শুধু ০. ১ % পানি খাদ্য হিসেবে পেয়ে থাকি। এর মধ্যে কিছু পানি আছে যেগুলো বোতলজাত করা পানি যা আমরা খেয়ে থাকি কিন্তু এই পানি কতটা নিরাপদ চলুন সে বিষয়ে জানা যাক।

বোতলজাত বাজারের সব পানি কি নিরাপদ না বিপদ

বোতলজাত বাজারের সব পানি কি নিরাপদ না বিপদ এই বিষয় সম্পর্কে আমরা কতটুকু অবগত।আমাদের সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন নিরাপদ বিশুদ্ধ পানি। পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী এবং উদ্ভিদের পানির প্রয়োজন হয়। পানি ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। আমাদের দৈনন্দিন ব্যস্ত জীবনে বিভিন্ন

কাজে জন্য পানি প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে যারা শহরে বসবাস করে সেসব মানুষদের জন্য বোতলজাত পানি নির্ভরশীল হয়ে থাকে। এছাড়া বাইরে হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁ রাস্তার পাশের দোকান, পদ ভ্রমণ অবস্থায় বোতলজাত পানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাসাবাড়ি উৎসব অনুষ্ঠান বিভিন্ন কাজে

বোতল জাত ও যার পানি খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই পানিগুলো কতটা নিরাপদ ও স্বচ্ছ আমরা সঠিকভাবে জানিনা। বোতলজাত পানি খেয়ে আমাদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে না তো?

বোতলজাত পানি কতটা নিরাপদ

বোতলজাত পানি কতটা নিরাপদ প্রথমে আমাদের সেই বিষয়টি জানতে হবে। এটি না জানলে আমরা যে বোতলজাত বাজারে পানি ব্যবহার করছি এ থেকে আমাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।বাংলাদেশ কৃষি গবেষণায় কাউন্সিল বিএআরসি একটি গবেষণা করে দেখেছে ৩৫ টি ব্র্যান্ডের বোতল

জাত ও ২৫০ টি যার পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের প্রায় 24 টি এলাকায় এই নমুনাসংগ্রহ করা হয়েছে। এবং পরীক্ষা করে প্রায় সব বোতলজাতপানে দূষিত বলে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের বিএআরসির একটি গবেষণা অনুযায়ী অনেক যার পানি দূষিত পাওয়া

গেছে, যেখানে কিছু ব্র্যান্ডের বোতলজাত পানির নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই গবেষণায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পানির নমুনা পরীক্ষা করে ইকোলি ব্যাকটেরিয়া সহ বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। যেটা দীর্ঘমেয়াদী যেমন ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, বমি হওয়া, পেট ব্যথা, জ্বর ঠান্ডা লাগা, শরীরের

বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। গবেষণায় বলা হয়েছে, ১০০ মিনিট যার পানির নমুনায় ১ থেকে ১৬০০ এমপি এন এর বেশি ই কলি পাওয়া গেছে। যেখানে বি এস টি আয়ের মান অনুযায়ী শূন্য ই কলি থাকা দরকার। এই গবেষণায় বিএআরসি ব্র্যান্ড বোতল ও যার পানির বিভিন্ন উপাদান এর গুণগত

মান বিশ্লেষণ করে তার ফলাফল প্রকাশ করেছে। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে বিভিন্ন ধরনের সাধারণ উপাদান রয়েছে যেমন টিডি এস খনিজ উপাদান লবণ মেটাল আয়রন ইত্যাদি। এছাড়াও ক্লোরাইড ক্লোরিফর্ম পিএইচ নাইট্রাইট লিড ক্রমিয়াম নাইট্রেট ইত্যাদি থাকা প্রয়োজন। বোতল জাত

পানিতে সেটা কি পরিমাণে রয়েছে ফলাফলে দেখা গেছে যে, ব্র্যান্ডের বোতলজাত পানি বিডি এস এর মান অনুসরণ করার চেষ্টা করলেও সেটা সঠিক নয়। কেননা বোতলের গায়ে ক্লোরাইড বা ক্রোমিয়াম এসবের কোন কিছুই উল্লেখ করা থাকে না। এইসব দূষিত যার পানি এবং ব্র্যান্ডহিন বোতল জাত পানি

খেয়ে মানুষের শরীর দিন দিন বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে। যেটা খেয়ে মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিন দিন নষ্ট করে দিচ্ছে। আর সেজন্য বিএআরসি গবেষণায় মানুষদেরকে সচেতন হতে বলেছেন। সব সময় নিরাপদ পানি পান করা এবং বোতলজাত পানি ব্যবহারের আগে সতর্ক থাকতে হবে।

পানি বিশুদ্ধ করার উপায় কি

পানি বিশুদ্ধ করার উপায় কি সেই বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন। আমাদের সবসময় বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। পানি বিশুদ্ধ করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। প্লাস্টিক বোতলের কিছু অংশ পুনঃ প্রক্রিয়াজাত করা হয়ে থাকে। আর এর কিছু অংশ তৈরি হয় বর্জ্যে। প্লাস্টিকের এই বর্জ্য ক্ষতি করছে মাটি পানি ও

বিষাক্ত করে তুলছে বায়ুমণ্ডল। তাই আমাদেরকে আরো সচেতন হতে হবে এবং বোতলজাত পানি বর্জন করতে হবে। যাতে করে আমাদের পরিবেশ এবং আমরা সুস্থ সুন্দর থাকতে পারি। আর সেজন্য বাইরে কোন ভ্রমণ অবস্থায় অথবা কোন উৎসব অনুষ্ঠানে এই বোতলজাত পানি ব্যবহার না করে নিরাপদ

বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করা উচিত। আমাদের বোতল জাত পানি কিনতে যে টাকা খরচ হয় তার চেয়ে অনেক কম খরচ হবে পানি বিশুদ্ধ করার কিছু নিয়ম যদি আপনি মেনে চলেন। বিভিন্ন উপায়ে পানি বিশুদ্ধ করা যায়। যেমন বৃষ্টির পানি ফুটিয়ে নেওয়া। ফিল্টারিং করা, রিসাইকেলিং করা ইত্যাদি উপায়। এ ছাড়াও পানি বিশুদ্ধ করার আরো কিছু উপায় নিচে আলোচনা করা হলো।

সোলার ডিসইনফেকশন- পানি বিশুদ্ধ করার উপায় হলো সোলার ডিস ইনফেকশন। এটি প্লাস্টিকের বোতলে পানি ভরে সরাসরি সূর্যের আলোতে রাখতে হবে এবং সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি পানির জীবাণু ধ্বংস করে দেয়। এভাবে সোলার ডিসিনফেকশন পদ্ধতিতে পানি বিশুদ্ধ করা যায়।

সোলার ওয়াটার ডিস্টিলেশন- সোলার ওয়াটার ডিস্টিলেশন এই উপাও পানি বিশুদ্ধ করা যায়। সূর্যের তাপে পানি বাষ্পীভূত করবে এবং সেই বাষ্প ঘনীভূত করে পানি বিশুদ্ধ হয়।

আলট্রা ফিলটেশন- এই পদ্ধতিতে একটি মেমব্রেন ব্যবহার করে পানি থেকে বৃহৎ অণু গুলি আলাদা করা হয়ে থাকে। এইভাবেই পানি বিশুদ্ধ করে খাওয়া যায়।

বায়ো স্ট্যান্ড ফিল্টার- এটি একটি ধীরগতি স্ট্যান্ড ফিল্টার যা থেকে জীবাণু এবং কিছু রাসায়নিক দূর করে দেয়। এই উপায়ে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়।

আয়োডিন বা ট্যাবলেট- পানিতে আয়োডিন বা ট্যাবলেট মিশিয়ে পানি বিশুদ্ধ করা যায়। এ থেকে পানির ভিতরে যে জীবাণু থাকে সেটি ধ্বংস হয়ে যায়।

কাপড় দিয়ে ছেকে নেয়া পদ্ধতি- প্রাচীন কাল থেকেই এই পদ্ধতি মানুষ অনুসরণ করে আসছে। আমরা বিশুদ্ধ পানি পান করার জন্য কাপড় দিয়ে ছেঁকে নেওয়া পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

ফিটকিরি ব্যবহার- পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ফিটকারি ব্যবহার করতে পারেনা। সেজন্য আপনি এক কলসি পানিতে সামান্য পরিমাণ ফিটকিরি মিশিয়ে দুই থেকে তিন ঘন্টা রেখে দিবেন পানির ভিতরে থাকা ময়লা জীবাণু পানির নিচে জমে যাবে এবং পানিটি বিশুদ্ধ হয়ে যাবে।

ফিল্টার- বর্তমান আধুনিক যুগে আমরা ফিল্টার ব্যবহার করে থাকি। পানি বিভিন্ন ধরনের ফিল্টার ব্যবহার করে বিশুদ্ধ করা যায়।

পানি সংরক্ষণের জন্য প্লাস্টিকের পাত্রের পরিবর্তে কাঁচ অথবা স্টিলের পাত্র ব্যবহার করা যায়। এগুলো ব্যবহারের ফলে বিশুদ্ধ পানি পান করা সম্ভব। তবে বিশুদ্ধ পানি করার পর সেটি পরিষ্কার পাত্রে সংরক্ষণ করা এবং নিয়মিত পানি ফুটিয়ে নেওয়া উচিত এটি ভালো উপায়।

বোতল জাত পানির জন্য কিভাবে সুরক্ষিত হয়

বোতল জাত পানির জন্য কিভাবে সুরক্ষিত হয় সে বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। কারণ সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের প্রয়োজন বিশুদ্ধ পানি। বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের ফলে আমাদের জীবন সুস্থ ও সুন্দর হবে। অনেক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন প্লাস্টিকের বোতলের পানি দীর্ঘদিন ধরে খেলে
বোতল জাত পানির জন্য কিভাবে সুরক্ষিত হয়


মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও রয়েছে কিডনির বিভিন্ন সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, প্রায় ৯৩% প্লাস্টিকের বোতলে রয়েছে বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান। যা মানব শরীর ধ্বংসের সম্মুখীন হতে পারে। প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করার জন্য মানুষের শরীরে হতে পারে মাইক্রো

প্লাস্টিক। এই সবকিছু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের কিভাবে পানি সুরক্ষিত রাখতে হয় সে বিষয়ে সম্পর্কে জানতে হবে।

পরিশোধন প্রক্রিয়া- এই প্রক্রিয়ায় ফিল্টারেশন, ইউভি রেডিয়েশন, রিভার্স, অসমোসিস ইত্যাদি ভাবে ব্যবহার করা যায়। এইভাবে পরিশোধন প্রক্রিয়ায় পানি সুরক্ষিত রাখা যায়।

বি এস টি আই এর মান অনুসরণ- বোতল পানির ব্র্যান্ড গুলি যেন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন বিএসটিআই এর মান অনুসরণ করে পানি সুরক্ষিত করা হয়। এ থেকে বোতলজাত পানি ব্যবহার করা যায়।

নিয়মিত পরীক্ষা- উৎপাদন কারখানাগুলির নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং পানির মান নিশ্চিত করে তা সংরক্ষণ করা যায়।

সচেতনতা ও সতর্কতা- আমাদের প্রত্যেকেরই সচেতন হওয়া উচিত যাতে করে বোতলজাত পানি কেনার আগে ব্র্যান্ডের সুনাম এবং মান সম্পর্কে জানতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

বর্তমানে আমরা বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান, হোটেল কিংবা রেস্তোরায় ইত্যাদি জায়গায় বোতলজাত পানি ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু বোতল জাত বাজারে সব পানি কি নিরাপদ না বিপদ? এই বিষয় সম্পর্কে আমরা হয়তো সবাই জানিনা। আজকের এই আর্টিকেলে বিষয়টি মনোযোগ সহকারে পড়ে নিশ্চয়ই

জানতে পেরেছেন। পানি বিশুদ্ধ করার উপায় কি? কিভাবে পানি সুরক্ষিত রাখা যায় ইত্যাদির বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে আপনারা নিশ্চয়ই উপকৃত হবেন। প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলটি সময় নিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এবং আমার লেখা আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুর সাথে শেয়ার করবেন ও লাইক কমেন্ট দিবেন।

 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url