প্রাচীন বাংলার গ্রামীনের নগর জীবন কেমন ছিল,
প্রাচীন বাংলার গ্রামীনের নগর জীবন কেমন ছিল, বিষয়টি দারিদ্র্য সমাজবিজ্ঞান জহুরুল ইসলাম এর বই থেকে কিছু অংশ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। বিষয়টি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়লে আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ আজ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র রূপে আপন
মহিমায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আজকের বাংলাদেশের জন্ম একদিনে হয়নি বহু শতাব্দীর ইতিহাসে ভাঙ্গা গড়া উথানপতন পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ আজকের পর্যায়ে উন্নতি হয়েছে ইতিহাসের পদ পরিক্রমায় অনেক পরাক্রমশালী ব্যক্তি শাসন করেছে এর ভূখণ্ড
প্রাচীন বাংলা গ্রামীণ ও নগর জীবন
সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষে থেকে বিশেষজ্ঞ গনের ধারণা অঞ্চলের প্রায় চার হাজার বছর পূর্বেও সংঘটিত মানব বসতি ছিল। বাংলায় সংঘটিত সমাজ ও রাজ্য ব্যবস্থার উদ্ভব উত্তর ভারতের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শাসন কাঠামো প্রতিষ্ঠার পরে হওয়ার স্বাভাবিক হলে বিভিন্ন বৈদিক সাহিত্যের বঙ্গসহ অঞ্চলে
উল্লেখ্য এবং এর আদিবাসীদের প্রতি তার বিদেশ থেকে ধারণা করা অসঙ্গতিপূর্ণ হবে না যে, সমসাময়িক কালে বাংলাদেশের সমাজবদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য সভ্যতার অধিকারী মানুষের অধিবাস ছিল এবং সংস্কৃতি ও সভ্যতায় তাদের কাছাকাছি উন্নত পর্যায়ে থাকায় এদের প্রতি তারা শত্রু ভাবো কোন ছিল। অতি প্রাচীন
কাল থেকে শুরু করে প্রায় মধ্যযুগ পর্যন্ত বাংলাদেশের সমগ্র কোন একক নামে পরিচিত ছিল না। এর বিভিন্ন এলাকা বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল আগে উল্লেখ্য করা হয়েছে ওই তোর এই অরণ্যকে গ্রন্থ সর্বপ্রথম বঙ্গ নামে উল্লেখ্য দেখা যায়। প্রাচীনকাল থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত প্রাচীন বঙ্গভূমি
রাঁড়, শুকনো তাম্রলিপি সমতট প্রভৃতি জনপদের বিভক্ত ছিল। উক্ত জনপদ গুলোর প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দুকে শহর বা নগর উল্লেখ করা যেতে পারে। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে রাজা শশাঙ্ক কর্তৃক জনপদ গুলোকে একত্রিত করে গৌর নাম দেয়া হয়। শশাঙ্কের পর হতে ১৫ ঘোর ও বঙ্গ এই তিনটি জনপদ মিলিতভাবে বঙ্গ বা বাংলা অঞ্চল হিসেবে মনে করা যায়।
প্রাচীন বাংলার জনপদ গুলোর প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু যেগুলো শহর হিসেবে বিবেচিত হবার জন্য কয়েকটি বিশেষ উপাদান থাকার কথা জানা যায়, সেগুলো হচ্ছে প্রশাসক বা অঞ্চল প্রধান ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার অফিস ও তাদের বাসভবন, প্রধান সামরিক অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট কাজ কার্যালয়
সরকারী আদালত , সরকারি খাদান প্রভৃতি। এ ধরনের শহর বানগর অত্যন্ত তিন হাজার বছর অথবা তারও পূর্বে প্রাচীন বাংলার গড়ে উঠেছিল বলে ধারণা পাওয়া যায়। প্রাচীন বাংলার প্রাপ্ত নগরে কেন্দ্রবিন্দু ব্যতিরেকে যে পরিসীমার ব্যাপ্তি এবং সাধারণত সমকালীন নাগরিক সুযোগ-সুবিধা যেখানে অনুপস্থিত, এ ধরনের অঞ্চলগুলোকে গ্রাম হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
প্রাচীন বাংলা গ্রামীণ কৃষি জীবন
ছিল কৃষি নির্ভর এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প নির্ভর। এগুলোর সংখ্যা খুব বেশি ছিল না এবং আয়তনের এগুলো ছিল ছোট। এগুলোর সংখ্যা খুব বেশি ছিল না এবং আয়তনের এগুলো ছিল ছোট। গ্রামের মানুষের চাহিদাও অনেক কম ছিল। এদের উৎপাদনের জন্য ভূমি থাকলেও খুব বেশি প্রয়োজন গ্রামবাসী ছিল
না। পক্ষান্তরে শহরের প্রয়োজন মেটাবার মতো সাধারণ সুবিশাল আয়তন এর কি সে ক্ষেত্রে থাকে না। প্রাচীন বাংলার শহরের আওতার বাইরে বৃহত্তর জনপদ বিস্তৃত কৃষি ক্ষেত্র ছিল। সেই কৃষি ক্ষেত্রকে আশ্রয় করে গ্রামের মানুষদের নিকটে বসতি করে গড়ে তুলে নিতে হতো। কৃষি কর্মের জন্য প্রধান প্রথম
প্রয়োজন হচ্ছে পানি। প্রাচীন বাংলায় দেখা গেছে যেখানে নদী নালা খাল বিল অর্থাৎ পানি সহজলভ্য সেখানেই সমৃদ্ধ গ্রাম গড়ে উঠেছে। এ কারণেই কৃষি সভ্যতার বিকাশ হয়েছে। সকলেরই জন্যই পানি প্রয়োজন। শহরবাসীর জন্য পানি তেমনি প্রয়োজন সরবাসের ভিন্ন রকমের প্রয়োজন। তাছাড়া
সহবাসের ক্ষেত্রে পানি সংগ্রহের বিকল্প অনেক পদ্ধতি থাকা যতটা সহজ গ্রামবাসীর ক্ষেত্রে ততটা নয়। তাছাড়া সহবাসের ক্ষেত্রে যতটা সহজ হয় গ্রামবাসী জন্য ততই সহজ কারণ গ্রামবাসী খুব খনন করে প্রাচীনকালের শহরে খুব সহজে পানি সংগ্রহ করে নিতো। শহর প্রতিষ্ঠার কোন একটি মাত্র চিহ্নিত
কারণও ছিল না প্রাচীন বাংলার নগরকেন্দ্রিক শাসন কার্যসুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় সুযোগ সুবিধা বাংলায় শহর গড়ে উঠেছিল। বাংলা সংশ্লিষ্ট নগরের রাজকর্মচারীরা এ শহরে বাস করতেন। রাস্তার যে প্রয়োজনে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ সেখানে যাওয়া আসা করতেন এসব বসতি ও যাতায়াতের পথকে
ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল হাট বাজার। যাতায়াত গমন নির্গমন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবার জন্য এ সকল শহর নগর নদীকে কেন্দ্র করে সাধারণ তো হাট বাজার গড়ে উঠেছিল। আর শহর নগরকে কেন্দ্র করে যে হাট বাজার গড়ে উঠেছিল তা সাধারণত এ সকল নদীর তীরে অথবা যাতায়াতের সুপ্রশস্ত্র রাজপথের
পাশে কিংবা উভয়ের সুবিধা সম্বলিত স্থানে। এ প্রসঙ্গে রাজা-মহারাজাদের রাজধানী এবং জয়েসকন্দাবারের দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে। এগুলো গড়ে উঠেছিল নদী ও রাজপথে উপলক্ষ করে সৈন্য পরিচালনা এবং সামরিক কার্যকর্ম শহরে পরিচালিত হতো। এছাড়াও এক ধরনের শহরে প্রতিষ্ঠা
হয়েছে শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য শিল্পের প্রয়োজন করা যেতে পারে। বিশেষ করে নৌ শিল্প বস্ত্রশিল্প এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে এ ধরনের শিল্প বা ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার জন্য হয় প্রশস্ত স্থলপথের প্রয়োজন অথবা জলপথ বা উভয়ই পথ। এক্ষেত্রে দেখা গেছে উভয়পথের জলস্থল পথের সঙ্গমস্থলেও
ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা থাকায় সেখানেও হাট বাজার এমনকি সহনগর গড়ে উঠেছে। এছাড়াও তীর্থস্থান বৃহৎ শিক্ষা কেন্দ্র বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র ইত্যাদিকে উপলক্ষ করেও শহর বা নগরের পতন হয়েছে বলে ধারণা করা যেতে পারে। শিল্প ব্যবসা-বাণিজ্য প্রকৃতি বিষয় নিয়ে যেমন শহর বিজড়িত
তেমনি ব্যবসায়ী বাণিজ্য কিংবা শিল্পের উন্নতি অবনীতি। অনুরূপ পিসি কে কেন্দ্র করে যেহেতু গ্রামের উন্নতি অবনতি তাই কৃষির ওপরে গ্রামের উন্নতি অবনতির নির্ভর করত। কারণ গ্রাম সভ্যতা হচ্ছে কৃষি নির্ভর অপরদিকে নগর সভ্যতা হচ্ছে ব্যবসায়ী বাণিজ্য নির্ভর। প্রাচীন বাংলা গ্রাম ও নগর সভ্যতায় আকৃতি গত পার্থক্য যেমন ছিল তেমনি ছিল প্রকৃতগত পার্থক্য
তারা সাধারণ কৃষি নির্ভর কৃষক শ্রমিক ভূমিহীন কৃষিশ্রমিকের সংখ্যায় প্রধান। এদের জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা কামনা বাসনা ধ্যান ধারণা সমস্ত কিছুই ছিল কৃষি ও এত এত সংক্রান্ত আশ্রয় করে। পক্ষান্তরে নগরবাসীদের অধিকাংশ ছিল সামন্ত শ্রেণির রাজ কর্মচারী শিল্পী। উপযুক্ত নগরবাসীদের
দৈনন্দিন প্রভৃতি কর্মে প্রয়োজন হতো শ্রমিকদের সুতরাং এ ধরনের শ্রমিকদের কেউ নগরে বসবাস করতে দেওয়া হতো। গ্রামে উৎপাদিত দ্রবাদের কৃষিজাত বা শিল্প দ্রব্য ইত্যাদি প্রয়োজনে শহরে আনীত হতো সুতরাং শহর বা নগর একদিকে যেমন শাসন কেন্দ্র ছিল তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র সামগ্রিক কারণে শহরের আদিবাসীরা গ্রামের আদিবাসীদের চেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা ও অসুখ ভোগ করতে পারত।
প্রাচীন বাংলায় অসংখ্য গ্রামের নাম পাওয়া যায় এ সমস্ত গ্রামের আয়তন বালক সংখ্যার সমান ছিল না ছোট ছোট গ্রামকে বলা হতো বাট বা পাঠক বা পাড়া প্রাচীন লিপিমালার বই গ্রাম পত্রলিতে বাই গ্রামে দুটি ভাগ ছিল যার একটি নাম ছিল ত্রিবৃতা ও অন্যটি ছিল শ্রী গহলে এছাড়াও মলসারুল লিপিতে নিভৃত
নাটক সান্যাল ইত্যাদি নামেও কয়েকটি গ্রাম বা পাড়া পাওয়া যায় গ্রামের মধ্যেও কম গুরুত্বপূর্ণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হতো গ্রামের অবস্থান ও সুযোগ সুবিধার উপর ভিত্তি করে। যে সকল গ্রামের অবস্থান জলাভূমি স্থল পথের ওপর লোকাল ও কৃষিজ ভূমি যেখানে সহজ প্রাপ্য ও প্রচুর কিংবা ব্যবসায়
বাণিজ্যের সুযোগ সেখানে রয়েছে শিল্প উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে অথবা শাসন কার্য পরিচালনার কোন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত থাকতো এবং শিক্ষা সংস্কৃতি ধর্ম কর্মের কেন্দ্রীয় ভূমি হিসেবে পরিচিতি এর সমস্ত গ্রাম গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেত। এসব গ্রামের লোক সংখ্যা বেশি থাকতো আয়তন
বেড়ে যেত এবং মর্যাদা দিক দিয়ে এ সকল সুবিধা বাঞ্ছিত গ্রামের চেয়েও বেশি মর্যাদা সম্পন্ন হিসেবে পরিগণিত হতো। এরকম কিছু কিছু গ্রামের খবর লিপিমালা ও সমসাময়িক সাহিত্যে পাওয়া যায়। বল্লাল সেনের নৈহাটি লিপিতে দেখা যায় বালটা একটি একরকম বৃহৎ গ্রাম। এটি ছিল বর্ধমান ভক্তের উত্তরার
মন্ডলের স্বল্প দক্ষিণ বিথির অন্তর্ভুক্ত। লক্ষণ সেনের গোবিন্দপুর লিপিতে বর্ধমান মুক্তির পশ্চিম খাঁটিকার অন্তর্ভুক্ত চতুর রেকের অন্তর্গত বিদ্যার শাসন গ্রাম লক্ষণ সেনেরই দর্পণ দীঘিলিপিতে উল্লেখিত অন্য গ্রামটি হচ্ছে বিক্রমপুরের অন্তর্গত বেন হিস্ট্রি গ্রাম উপযুক্ত তিনটি গ্রাম বিভিন্ন আয়তনের এবং বিভিন্ন
বিশ্লেষণ বিজড়িত। এভাবে দেখা যাচ্ছে প্রাচীন বাংলার এ গ্রামগুলোতে উসার ভূমির মালভূমি গর্ত গোচরণ ভূমি খাল বিল পুষ্করিণী নদী, নদীর খাট ইত্যাদি রয়েছে। এ গ্রাম গুলোর মানুষ বন জঙ্গল হতে জ্বালানি কাঠ ঘরবাড়ি নির্মাণ করার জন্য ৫ কোটি ইত্যাদি সংগ্রহ করত।
পর্বে উল্লেখ করা হয়েছে প্রাচীন বাংলার গ্রামীণ সমাজ কৃষি প্রধান সমাজ। তবে শিল্পীদের বাসাও ছিল এখানে শিল্প কার্ড শিল্প মৃৎশিল্প কার পাস ও অন্যান্য বস্ত্র শিল্প ইত্যাদির কেন্দ্রীয় গ্রামের ছিল বলে অনুমান করা যায়। কৃষি কাজের জন্য প্রয়োজন ও বেতের নানা প্রকার পাত্র ঘর বাড়ি নৌকা মাটি নির্মিত
হাড়ি পাতের লোহার দাগ কোরাল কোদাল লাঙ্গলের ফলা ফান্তা ইত্যাদি নৃত্য ব্যবহার্য কৃষি যন্ত্রের প্রয়োজন ছিল গ্রামে। কার্পাস ফুলা তুলাধনা ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রামে বেশি ছিল যার সহজে ব্রাহ্মণ ছিল সুতা কাটা দরিদ্র ব্রাহ্মণ গৃহস্থ বাড়ির মেয়েদেরও কর্ম ছিল তারা কাপড় পর্যন্ত। কেশবের লিপি হতে প্রাপ্ত
তথ্যে জানা যায় তাশারী শিল্প ও হাতের দাঁতের শিল্প গ্রামে বেশ চালু ছিল এর সকল কার্যক্রমের সূত্রের কোন কোন ব্যবসায়ীরা গ্রামে বসবাস করতেন তারা শহরের সঙ্গে ব্যবসায়ী মধ্যসরের দায়িত্ব পালন করতেন। প্রধান প্রধান পেশাজীবী ও শ্রেণীর মধ্যে ছিল ব্রাহ্মণ ভূমির মালিকগণ ক্ষেত কর ভূমিহীন
কৃষিশ্রমিক কর্মকার মালাকার চরিত্রকর সূত্রধর প্রভৃতি শিল্পীরা। ছাড়া কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং গ্রুপ প নাপিত রজব নর্তক নর্তকে ইত্যাদি এবং এছাড়াও নিম্ন শ্রেণীর মানুষ। কৃষি প্রধান প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতি যেমন বাংলা গ্রামীণ জীবনকে প্রভাবিত করেছে তেমনি নাগরিক সভ্যতা কেউ করেছে চাকচিক্য
অবৈচিত্র্যময়। গ্রামীণ সমাজ বহুলাং সে অস্ট্রিক্ট ভাষাভাষী আদিবাসিদের দান কে স্বীকার করে অপরপক্ষে নাগরিক সভ্যতায় দাবির ভাষাভাষী মানুষের অবদান রয়েছে নিচে বাংলার নগর ও নাগরিক সভ্যতার বিভিন্ন দিক আলোচিত হলো।
গ্রাম প্রধান হলেও বাংলায় নগর জীবনের গুরুত্ব কম নয় প্রাচীন বাংলায় শহর বা নগর হিসেবে মহাস্থান কোটি বর্ষ দেব কোড তাম্রলিপি প্রভৃতির নগর ভারত উপমহাদেশে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছিল। সমসাময়িক লিপিমালায় এবং সাহিত্যে বাংলার অনেক নগরের উল্লেখ এবং বিবরণ পাওয়া যায় তাছাড়া
প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের খননকার্য এবং বাংলায় প্রাপ্ত স্থাপত্য পড়া মাটির ফলক ইত্যাদি থেকেও কোন কোন নগরে অবস্থিত ও বিন্যাস সম্বন্ধে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। এবং বাংলায় প্রাপ্ত স্থাপত্য ইত্যাদি থেকেও কোন কোন নগরের অবস্থিত ও বিন্যাস সম্বন্ধে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। গ্রাম ও শহরে পার্থক্য
পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের মতোই বাংলা ও লক্ষ্য করা যায় সাধারণত দেখা যায় গ্রামগুলোতে প্রধানত ভূমি ও কৃষি নির্ভর কিন্তু নগর নানা প্রয়োজনে গড়ে ওঠে এবং শহরের অর্থনৈতিক নির্ভরতায় কৃষি কিছুটা ভূমিকা রাখলেও শিল্প ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি নগরবাস শহরের প্রধান নির্ভরতা তবে ব্যতিক্রম রয়েছে।
প্রাচীন বাংলা প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ভৌগোলিক প্রভাব কেমন ছিল
ইতিহাস ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক পরিবেশ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয় তাই প্রকৃতি ও ভূগোলের সাথে ইতিহাসের একটি নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। প্রকৃতি হচ্ছে ইতিহাসের ভিত্তি প্রাচীন বাংলা প্রাকৃতিক পরিবেশ তৎকালীন মানুষের জীবনের গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিল একথা ধরে নেয়া যায়।
বাংলা পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ যা ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্ব সঞ্চিত করে অবস্থিত। বাংলার উত্তর সীমায় হিমালয় যার কল ঘেঁষে নেপালের তাবায় অঞ্চল ও শিলং মালভূমি। দক্ষিণ সীমানায় বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশি পূর্বে অবস্থিত ত্রিপুরা গারো অনুসারে পর্বতমালা। পশ্চিমে রাজমহল ও ছোট নাগপুরের
পার্বত্য ভূমি বাংলার বেশিরভাগ ভূখণ্ডই গড়ে উঠেছে নদী বিধ্বলি দ্বারা গঙ্গা ভাগীরথী পদ্মা মেঘনা যমুনা বংপুত্রসহ অসংখ্য নদ নদী এদেশের বুক চিরে প্রবাহিত। এসব নদীর পল্লী দ্বারা গঠিত সমভূমি অঞ্চলের শস্য প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়। এ সমভূমি দক্ষিণ দিকে ক্রমশ ঢালু এবং সাগরের সঙ্গে
ক্রমশ মিশে গেছে সমুদ্র কুড়ি ভর্তি নিম্ন ভূমি মূলত জলা কিন্নো যা সুন্দরবন নামে পরিচিত। সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তরস বন বাংলার পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ি বন অঞ্চল। বাংলার ভৌগোলিক পরিচয় দিতে গিয়ে নীহাররঞ্জন রায় বলেন এ প্রাকৃতিক সীমা বিস্তৃত ভূখণ্ডের মধ্যে প্রাচীন
বাংলার গৌরব বরেন্দ্রীড়ার স্বপ্ন তাম্রলিপি বঙ্গ বঙ্গ হরিকেল প্রভৃতি জনপদ ভাগীরথী করতোয়া বঙ্গপুত্র পদ্মা মেঘনা এবং আরো অসংখ্য নদনদী বাংলা গ্রাম নগর প্রান্তর পাহাড় প্রান্তর। ঐতিহাসিক কালের বাঙালির কর্ম কীর্তি উৎস এবং ধর্ম কর্ম নর্মভূমি একদিকে সূর্য পর্বত দুই দিকে কঠিন শৈলভূমি আর একদিকে বিস্তীর্ণ সমুদ্র মাঝখানে সমভূমির সাম্য ইহাই বাঙালির ভৌগোলিক ভাগ্য।
লেখকের মন্তব্য
প্রাচীন বাংলা গ্রামীনের নগর জীবন কেমন ছিল। এই বিষয়টি সম্পূর্ণ বই থেকে নেয়া হয়েছে প্রাচীন বাংলায় অসংখ্য গ্রামের নাম পাওয়া যায় শুরু হয়েছিল ঠিক কখন থেকে বর্তমান বাংলাদেশের পশ্চিমে অবস্থিত। পশ্চিমে অবস্থিত বাংলায় প্যাথিওলিথিক মাইক্রোলিথিক বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া যায়
গবেষকরা অনুমান করেছেন এ ধরনের অস্ত্রপ্রাপ্তি আমাদের এই সংবাদ দেয় যে কম করে হলেও 10000 বছর পূর্ব থেকে এই বাংলায় প্রথম মানুষ বাস করতে আরম্ভ করেছিল। জাতের মধ্যে কিংবা আর্যদের আগে যেসব জাতি বাংলায় বসবাস করত তাদের মধ্যে অধিকাংশ ছিল শবর কল িন্দ হাঁড়ি ডোম
চন্ডালকরা তামির মুন্ডারি ও নিষাদ জাতিভুক্ত ইত্যাদি। অনেক ইতিহাসবিদ কাজ তো সদগম করবো তো উপমহাদেশে আর্যদের আগমনের পরেও দক্ষিণ-পূর্ব ভারতে শেষ পর্যন্ত অনার্য প্রাধান্য থেকে গিয়েছিল। তাদের স্থান অধিকার ধরে রাখতে এবং আগত আর্যরা তাদের প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে সমগ্র ভারতীয়
উপমহাদেশ জুড়ে আর্য অনার্সের যৌথ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস গড়ে উঠেছে প্রধানত প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের ওপর ভিত্তি করে। প্রাচীনকালে বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে একক কোন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। ১৯১২ সাল প্রথম তার হাতে আবিষ্কৃত হয় সিন্ধু নদীর উপত্যকায়
অতি প্রাচীনতর এক সভ্যতার নিদর্শন থেকে। প্রাচীন যুগের ইতিহাস সাত শত বছরের অধিক সময়ে ডক্টর অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন। দেশের আদি যুগের ইতিহাস কাল সীমার কৃষ্টি ও পঞ্চম শতাব্দীর গুপ্ত যুগ থেকে দ্বাদশ শতাব্দী সেনের পরাজয় পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো বঙ্গদেশ জুড়ে একক
কোন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। অনেকগুলো ক্ষুদ্র অঞ্চলে বিভক্ত ছিল এ দেশ প্রত্যেক অঞ্চলের শাসক ইচ্ছামত শাসন কার্য পরিচালনা করতেন অঞ্চলগুলোর ঠিক রাজ্য বা রাষ্ট্রের মত ছিল না অঞ্চলগুলোর জনপদ নামে পরিচিত লাভ করে। বাংলাদেশের ইতিহাসের যাত্রা ঠিক কখন হয়েছিল তার
দিনক্ষণ তারিখ হিসেব করে বলা না গেলেও এ কথা সত্য যে বহু শতাব্দী পূর্বে বাংলাদেশের ইতিহাসের পদ পরিক্রমা শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসের অনুসন্ধানে আমাদের নির্ভরশীল হতে হয় বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রস্তর ফলক অনুশাসনের মুদ্রার ওপর। এসব নিদর্শন এর উপর ভিত্তি
করে বলা যায় তালের বিবর্তনের ধারে প্রাচীন গড়ে ওঠে। তবে প্রাচীন বাংলার সমাজ সংস্কৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন লিপি মালা তা আমরা শাসনের বিবরণ হতে যতটুকু জানা যায় তা অনেকটা অনুমান নির্ভর। গ্রামবাসীদের সব সরল দৈনন্দিন জীবন যাপন কখনো দারিদ্র্যের সু করুন জরাজীর্ণ চিত্র অথচ এসব
চিত্র যে যুগের সে যুগের গ্রামের কৃষি এবং গ্রামীন গৃহশিল্পী লব্ধ সম্পদে ছিল প্রধানত সামাজিক সম্পদ মূলত সম্পদের প্রধান অংশ গ্রামের উৎপাদিত হলেও ভোগের অধিকার তাদের ছিল না বললেই চলে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url